স্বদেশ ডেস্ক: আওয়ামী লীগের সর্বশেষ অর্থাৎ ২০-তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। পরবর্তী সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করেছে দলটি। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর ২১-তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কমিটির মেয়াদ আছে আর মাত্র ৩৭ দিন। অথচ এই কমিটি দলের জেলা কমিটিগুলোর সম্মেলন করতে পারেনি। গত তিন বছরে কেবল একটি জেলা কমিটির সম্মেলন হয়েছে। ফলে এর দায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ওপরই পড়েছে।
আওয়ামী লীগের মোট সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্যে কেবল মৌলভীবাজার জেলার সম্মেলন ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউন্সিল না হওয়ায় বাকি ৭৭টি জেলা কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ।
গত শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিটি না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দায়িত্বশীল নেতাদের বিশেষ করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন। নেতারা জেলা সফর করেন কিন্তু কাজ করেন না বলেও ভর্ৎসনা করেন।
পরবর্তী জাতীয় সম্মেলনের আগে দলটির হাতে সময় আছে তিন মাস ৫ দিন। এর মধ্যেই বর্তমান কমিটিকে সব জেলায় সম্মেলন করতে হবে। কেন্দ্র থেকে জেলাগুলোর সম্মেলন করার ব্যাপারে কোনো দিনক্ষণও বেঁধে দেওয়া হয়নি। দলীয় সভানেত্রীর ক্ষোভের পর গতকাল সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জেলা সম্মেলন করার জন্য জেলার নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও অন্যান্য ইউনিটের সম্মেলন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই দলের জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাউন্সিল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের কমিটি পুনর্গঠন কাজ চলমান।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটির মেয়াদ তিন বছরের। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদও তিন বছরের। দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে জেলা ও অন্যান্য ইউনিটের কাউন্সিল হওয়ার নিয়ম রয়েছে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের আগে ৭৮টি জেলার মধ্যে ৫৮টি জেলায় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় কয়েকজন নেতার নানা ‘অপকর্ম’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সম্প্রতি দুটি বৈঠকে বলেছেন, সবার আমলনামা তাঁর কাছে আছে। একই ভাবে গত শনিবারের বৈঠকে মাত্র একটি জেলায় সম্মেলন হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির একাধিক নেতা জানান।
আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি ছাড়া ৭৭টি কমিটিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে এই কমিটিগুলোর বেশির ভাগের সর্বশেষ কাউন্সিল ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কমিটি নেই নারায়ণগঞ্জে। ২০০৬ সালের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সম্মেলন হয়। তবে কমিটি হয় ২০১৩ সালে। আর সিলেটে সম্মেলন হয় ২০১১ সালে।
নাম না প্রকাশের শর্তে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, ২০১২ সালে দলের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা আরও এক বছর ছিল। ফলে তারা সময় পেয়েছেও বেশি। অন্যদিকে এই কমিটি গঠনের পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে নেতা-কর্মীরা নির্বাচনমুখী হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। এর পর বর্তমান কমিটি সময় পেয়েছে কম সময়। কিন্তু বিগত কমিটি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর সম্মেলন করা পর্যন্ত দুই বছর ১০ মাস সময় পেয়েছে।
ওই নেতা বলেন, মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কাল বুধবার দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা হবে। সেখানে জেলা ও অন্যান্য ইউনিটের কাউন্সিল নিয়ে কথা হবে।